হাজারো পথশিশু যাদের জীবন সংগ্রামের কোনো শেষ নেই !

by The Justice Bangla

সামির হোসেন মোহনঃ বাংলাদেশের প্রতিটি শহরের রাস্তা কিংবা ফুটপাত চোখ মেললেই দেখা যায় অসংখ্য পথশিশু। শহর জুড়ে নানা জায়গায় দেখা মেলে তাদের কিন্তু এই পথ শিশুদের পাশে হয়তো খুব অল্প মানুষই দাঁড়ায়।

ঠিক তেমনি চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায়ই দেখা যায় ছোটো ছোটো শিশু ফুটপাতে খেলাধুলা করে। আমি এমনও দেখেছি ফুটপাতের মাটিতে পরে থাকা খাবার অবিলম্বে কুড়িয়ে খায় শিশুরা। এইধরণের পরিবেশে বেড়ে উঠে তারা। রোদ বৃষ্টি শীত বর্ষা সব যেখানে একাকার, সেখানে এদের বসবাস।

এই শিশুরা একটু বড় হলে জীবিকার তাড়নায় ছুটে চলে পথ থেকে পথে। আমাদের দৈনিক চলার পথে আমরা দেখি এদের কখনো ফুল, কখনো চকলেট অথবা অন্য কোন পণ্য হাতে ঘুরে বেড়াতে। জীবন এদের মৌলিক সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
নু্্যনতম জৈবিক সুবিধা তারা পাচ্ছে না। এরা জড়িয়ে পড়ছে নেশার ভয়াল জগতে, জড়াচ্ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যার ৮০-৯০ শতাংশ উঠে এসেছে পথশিশুদের মধ্য থেকে। মেয়ে পথশিশুরা শৈশব থেকেই যৌন হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে, পরবর্তীতে দেহব্যাবসায় জড়িয়ে যাচ্ছে।

হাজারো পথশিশু, যাদের জীবন সংগ্রামের কোনো শেষ নেই। এরা সমাজের এক অবহেলিত অংশ, যারা শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা—এই মৌলিক অধিকারগুলো থেকে একেবারেই বঞ্চিত।

শহরে রাস্তা ফুটপাতে ঘুরে বেড়ানো এইসব পথশিশু যারা একটু সাদছন্দে বাঁচতে চান নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান । তবে বিষণ্নতার দেয়ালে থমকে আছে তাদের জীবন সংগ্রাম যার কারণে তারা নিজেদের প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা মেলে এইধরণের পথশিশুদের যেমন অলংকার , নিউমার্কেটে চত্বর , ষোলশহর ষ্টেশন, বড়তলীষ্টেশন, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, জিইসিমোড়, সিআরবি, আগ্রাবাদ ।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পরিবার-পরিজন হারিয়ে বা পরিবারের অসহায় অবস্থার কারণে এরা রাস্তায় বেড়িয়ে পড়েন।
পথশিশুরা প্রায়ই খাবার ও আশ্রয়ের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি, গাড়ির জানালা মোছামুছি কেউ বা ফুল ,পেপার ,পানি পুরাতন জিনিস বিক্রি কিংবা ছোটখাটো কাজ করে।

তাদের মধ্যে আবার কিছু অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন,অপরাধচক্রের শিকার হন। কিছুক্ষেত্রে দেখা যায় সমাজের কিছু রাজনৈতিক নেতা ও স্বার্থান্বেষী মহল তাদেরকে দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম যেমন চুরি, ছিনতাই ,মাদক- পাচার, লুটপাট ডাকাতি খুনের মতো অপরাধবান্ধব কাজে জড়িয়ে ফেলেন।

এছাড়া অধিকাংশই পথশিশু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হচ্ছেন, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে। স্কুলে যাওয়া তাদের জন্য স্বপ্নের মতো। বেশিরভাগেরই জন্মনিবন্ধন বা সঠিক কোনো পরিচয়পত্র নেই, যা ভবিষ্যতে চাকরি বা কোনো সামাজিক সুবিধা পাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেয়।

সরকার পরিবর্তন হলেও এখনো অব্দি পথশিশুর জীবন পরিবর্তন হয়নি ।বেসরকারি সংস্থাগুলো বার বার উদ্যোগ নিয়েও ব‍্যর্থ । ব‍্যর্থতার কারণ কী? তাহলে তো প্রশ্ন থেকেই যায় । সরকারই কি তাহলে হতদরিদ্রের দিকে তাকাচ্ছে না?

সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য পদক্ষেপ নিলেও তা এখনও অপর্যাপ্ত। কিছু বেসরকারি সংস্থা তাদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করে এবং পুনর্বাসনের চেষ্টা করে। তবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমিল্লিত প্রয়াস ছাড়া এই সমস্যার সমাধান আদৌ কতটুকুই বা সম্ভব?

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য করণীয় পথশিশুদের পুনর্বাসন এবং তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারের সুনজর।
পথশিশুদের জন্য একটি সমন্বিত ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা ,স্বাস্থ্যসেবা, এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলাই তাদের আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ার প্রথম ধাপ।

মূলত ব্যাক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে আমাদের সকলকে পথশিশুদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে এগিয়ে এসে আমাদেরই উচিত এই পথশিশুদেরকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা।

You may also like

Leave a Comment