মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশে ‘আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক’ কর্ম ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আশাব্যঞ্জক নয়। সম্প্রতি ব্র্যাকের ‘ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর দি ওমেন অ্যান্ড ইয়থ ইন কক্সবাজার (আইজেক-ISEC)’ প্রকল্পের এক জরিপে দেখা যায়, কক্সবাজারে মার্কেট ও হোটেল খাতে নারীদের কর্মসংস্থানের বেশ সুযোগ রয়েছে। তবে এসব খাতে এখনো নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে কম।
আজ বুধবার (২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২৫) কক্সবাজারের স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজিত ‘আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক অ্যাডভোকেসি সংলাপে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। আইজেক (ISEC) প্রকল্পের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগহণ বাড়াতে বিভিন্ন সুপরিশ তুলে ধরেন।
নারীদের কর্মসংস্থানসহ সার্বিক উন্নয়নে উঠে আসা সুপারিশমালার মধ্যে নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা, স্থানীয় বাজারগুলিতে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ টয়লেট নির্মাণ, হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে ‘জেন্ডার চ্যাম্পিয়ন’ স্বীকৃতি প্রদান করে নারী-সহায়ক নীতি বাস্তবায়নকে উৎসাহিত করা এবং নারী শ্রমিকদের অভিযোগ সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ উল্লেখযোগ্য। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো যৌথভাবে কাজ করা জরুরি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে এই সংক্রান্ত জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভারসিটি প্রোগ্রামের প্রধান মাসুমা বিল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য এবং প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরবেন ব্র্যাক-এর আইজেক (ISEC) প্রকল্পের প্রধান খন্দকার ফখরুল আলম।
সংলাপ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী, কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মুরশেদ চৌধুরী প্রমুখ।
এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক, বাজার কমিটি, নারী উদ্যোক্তা, শ্রমিক প্রতিনিধি, উন্নয়ন সংস্থা এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ মোট ৫০ জনের অধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, ”আমরা কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে চাই। তবে সে কাজ বাস্তবায়নে পর্যটনখাতে অবশ্যই নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।”
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ”যেকোনো কিছু টেকসই করার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল নিরাপত্তা। কক্সবাজারে নারী-পুরুষসহ সকল পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।”
আমরা কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প কে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে চাই। তবে সেটির জন্য পর্যটনখাতে অবশ্যই নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে
ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান কাজী রওশন আরা বলেন, “বাজার ও হোটেল খাতে নারীবান্ধব অবকাঠামো ও নীতি বাস্তবায়ন জরুরি। এতে শুধু নারীর কর্মসংস্থানই নয়, পুরো অর্থনীতি উপকৃত হবে।”
মাসুমা বিল্লাহ বলেন, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, কর্মসংস্থানে যুক্ত হওয়া নারীদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই বিভিন্ন বাধার কারণে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ দেশে ‘আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক’ খাতে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এসব খাতে নারীদের কর্মসংস্থান বাড়লে অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। ”
প্রসঙ্গত: আইজেক (ISEC) প্রকল্পটি কক্সবাজারের ৯টি উপজেলায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়নে কাজ করছে। গ্লোবাল এফেয়ার্স কানাডার আর্থিক সহায়তায় ব্র্যাক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এই প্রকল্পটির নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো কক্সবাজার জেলার শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন যুব, নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে বাজার উপযোগী, জেন্ডার-সংবেদনশীল দক্ষতা ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা।