মোঃ ইফতেখার হোসেন সাকিবঃ ৭১ বছর বয়সে পৃথিবীর মঞ্চ থেকে বিদায় নিলেন কিংবদন্তি এই রেসলার।
যার প্রকৃত নাম ছিল টেরি জিন বোলিয়া। জন্ম ১৯৫৩ সালের ১১ আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের অগাস্টা শহরে। তবে বেড়ে ওঠা ফ্লোরিডার টাম্পা শহরে।
১৯৭৭ সালে রেসলিং জগতে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু ১৯৮০‑এর দশকে যখন WWE‑তে যোগ দিলেন— তখনই শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়। স্বর্ণকেশী সেই যোদ্ধা হয়ে উঠলেন রেসলিং দুনিয়ার রাজপুত্র। তার শক্তি, ক্যারিশমা, আর আইকনিক ‘Leg Drop’ ফিনিশিং মুভ— তাকে এনে দেয় অগণিত ভক্ত ও অবিস্মরণীয় খ্যাতি।
হাল্ক হোগান শুধু এক নাম নয়— তিনি ছিলেন এক বিপ্লবের নাম, এক আবেগের নাম— যার নাম ‘হাল্কামানিয়া’।
তিনি ৬ বার জিতেছেন WWE ও WCW-র বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব। দুইবার স্থান পেয়েছেন WWE Hall of Fame‑এ— একবার এককভাবে, আরেকবার nWo দলের সদস্য হিসেবে।
১৯৮৭ সালের WrestleMania‑তে ঘটে এক বিস্ময়কর ঘটনা— প্রায় ৭ ফুট লম্বা দৈত্য আন্দ্রে দ্য জায়ান্ট‑কে কাঁধে তুলে মাটিতে ছুড়ে মারেন তিনি! সেই জয় শুধু একটি ম্যাচের বিজয় নয়— তা ছিল সাহস আর অসম্ভবকে জয় করার প্রতীক। আজও সেই মুহূর্ত ইতিহাসে স্বরনীয় ।
তবে হাল্ক হোগানের জীবন কেবল রিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রিংয়ের বাইরে ছিলেন অভিনেতা, সংগীতশিল্পী এবং পপ কালচারের এক জনপ্রিয় মুখ। তবে ব্যক্তিগত জীবনে বিতর্কও কম ছিলো না— ব্যক্তিগত ভিডিও ফাঁস, বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্যসহ নানা কেলেঙ্কারিতে জড়ান তিনি। তবুও, সময়ের সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে আবার ফিরেছেন— ভক্তদের ভালোবাসা অর্জন করেছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি ভুগছিলেন কিডনি ও হার্টের জটিলতায়। ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন কয়েকদিন ধরে। অবশেষে ২৪ জুলাই ২০২৫, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ক্রীড়াঙ্গন এবং বিনোদন দুনিয়া। বিশ্বজুড়ে লাখো ভক্তের হৃদয়ে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।
শোকবার্তা দিয়েছেন WWE প্রেসিডেন্ট নিক খান, কিংবদন্তি রেসলার ট্রিপল এইচ, জন সিনা, ‘দ্য রক’ ডোয়াইন জনসন, কেভিন ন্যাশ, শেন ম্যাকমোহন, এমনকি দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী রিক ফ্লেয়ার-ও তাকে স্মরণ করেছেন শ্রদ্ধাভরে। সবাই বলছেন— তিনি ছিলেন একজন মহান প্রতিযোগী, বন্ধু ও চিরন্তন অনুপ্রেরণা।
এদিকে পহাল্ক হোগানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। Truth Social‑এ তিনি লেখেন—
“আমার বন্ধু হাল্ক হোগান ছিলেন একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন, একজন মহান মানুষ, আর সবচেয়ে বড় কথা— একজন লড়াকু যোদ্ধা। তার মত মানুষ আর একটিও নেই। তিনি ছিলেন একজন জয়ী, একজন অনুপ্রেরণা, আর একজন আসল তারকা। আমরা তাকে খুব মনে করবো। ঈশ্বর তার আত্মাকে শান্তি দিন।”
‘দ্য রক’ টুইটারে লেখেন— “তুমি শুধু একজন রেসলার ছিলে না— তুমি ছিলে একটা আন্দোলন। তোমার কারণেই আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি।”
জন সিনা বলেন— “হাল্ক হোগান ছিলেন আমার ছেলেবেলার নায়ক। তার দেখানো পথেই আমি রেসলিংয়ে এসেছি।”
তার মৃত্যুর খবরে সারাবিশ্বের রেসলিং ফ্যানরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ভরিয়ে দেন।
হাল্ক হোগান শুধু এক রেসলার নন— তিনি ছিলেন একটি যুগের প্রতীক, এক সংস্কৃতির নাম। রেসলিংকে বিশ্ব দরবারে তুলে এনেছিলেন যিনি— যার নাম জানতো শিশু থেকে বৃদ্ধ, যার হাসি আর জয়ের ভঙ্গি আজও চোখে ভাসে কোটি ভক্তের।
আজ তিনি নেই… তবে ইতিহাসের পাতায়, আর লাখো ভক্তের হৃদয়ে হাল্ক হোগান চিরকাল অমর।
বিদায় হাল্ক হোগান— রিংয়ের সেই অবিনাশী হিরো, যার স্মৃতি রয়ে যাবে চিরভাসমান হয়ে।