মোহাম্মদ সামিরঃ বাংলাদেশ আজ এক অনিশ্চিত মোড়ে দাঁড়িয়ে। রাজনৈতিক উত্তেজনা, গ্রেফতার, মামলা, আবার সামাজিক মাধ্যমে গুজব ও প্রোপাগান্ডা—সবকিছু মিলে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। প্রতিদিনের জীবনের কষ্টের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা। প্রশ্ন উঠছে দেশ কি নতুন এক অশান্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে?
গুজবের দমকা হাওয়া সোশ্যাল মিডিয়া এখন কেবল বিনোদন বা তথ্যের জায়গা নয়, বরং রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্র। প্রতিদিন নতুন নতুন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কোথাও বলা হচ্ছে বড় আন্দোলন আসছে, কোথাও আবার দাবি উঠছে সহিংস সংঘর্ষের প্রস্তুতি চলছে। এগুলোর বেশিরভাগই যাচাই-বাছাইবিহীন, কিন্তু মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করছে।
কূটনৈতিক নজর বাংলাদেশ কখনোই একা নয়। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এই দেশের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। তাই অস্থিরতা মানে শুধু অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, আন্তর্জাতিক স্বার্থও এতে জড়িয়ে যায়।যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তি স্পষ্ট করে দিচ্ছে, তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে ছাড় দেবে না।ভারত চাইছে স্থিতিশীলতা কারণ সীমান্তে অস্থিরতা মানে তাদের জন্য নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকি।
চীন তার বড় বিনিয়োগের কারণে উদ্বিগ্ন। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়লে তার প্রকল্পগুলোও ঝুঁকিতে পড়বে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলোও সতর্ক করছে, অশান্তি দীর্ঘ হলে তা মানবিক সংকটে রূপ নিতে পারে।
প্রশ্ন হলো আমরা কি আবারও একই পথে হাঁটতে যাচ্ছি? আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, সংলাপহীনতা বারবার বড় সংকট তৈরি করেছে। এখনো যদি সরকার ও বিরোধী পক্ষ নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে আলোচনায় না বসে, তবে আগামীর পথ আরও কঠিন হবে।
কেন জরুরি এখনই সমাধান অর্থনীতি ইতোমধ্যে চাপের মুখে। বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষা করছে স্থিতিশীলতা আসবে, না কি অস্থিরতা বাড়বে।শ্রমবাজার ও প্রবাসী আয়ের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের জীবনে স্বস্তি চায়।
দেশের সংকট সমাধানের দায় কেবল রাজনীতিবিদদের নয়, আমাদের সবার। আমরা যদি সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে গুজব ছড়াই, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আবার রাজনীতির মাঠে যদি সংলাপের বদলে সংঘাতই প্রধান হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তবে এর খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে।
বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে তা নির্ভর করছে আজকের সিদ্ধান্তের ওপর। সংলাপ, আস্থা ও সমঝোতার পথ যদি খোলা হয়, তবে অশান্তি এড়ানো সম্ভব। আর যদি তা না হয়, তবে শুধু আমরা নয়, আন্তর্জাতিক মহলও বাংলাদেশকে সংকটের দেশ হিসেবে দেখতে বাধ্য হবে।