মোঃ ইফতেখার উদ্দিন সাকিবঃ বাংলাদেশে বর্ষাকালে মশার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। জলবায়ুর পরিবর্তন, আর্দ্রতা বৃদ্ধি, এবং জমে থাকা পানির কারণে মশা প্রজননের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়। মশার এই উৎপত্তি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মশার উৎপত্তিস্থল :
বর্ষাকালে জমে থাকা পানি মশার জন্য প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র। সাধারণত নিম্নলিখিত স্থানগুলো মশার প্রজননের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ:
১. প্লাস্টিকের পাত্র ও বোতল: অব্যবহৃত প্লাস্টিকের পাত্র ও বোতলে জমে থাকা পানি।
২. ফুলের টব ও বাগান: টবে বা বাগানের কোণায় পানি জমে থাকা।
৩. ড্রেন ও খোলা নালা: অপরিষ্কার ড্রেন ও নালায় জমে থাকা পানি।
৪. টায়ার ও টিনের কৌটা: পরিত্যক্ত টায়ার ও কৌটায় জমা বৃষ্টির পানি।
৫. নদী বা পুকুরের আশপাশে জলাবদ্ধ এলাকা: যেখানে পানি স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশিত হয় না।
মশাবাহিত রোগসমূহ
মশার কারণে বিভিন্ন রোগ ছড়ায়, যা মানুষের জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু রোগ হলো:
১. ডেঙ্গু জ্বর: এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। এর লক্ষণগুলো হল জ্বর, শরীরে ব্যথা, র্যাশ ইত্যাদি।
২. ম্যালেরিয়া: অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। জ্বর, শীত-গরম, এবং ঘাম এর সাধারণ লক্ষণ।
৩. চিকুনগুনিয়া: এডিস মশার আরেকটি বিপজ্জনক রোগ। এতে জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা এবং ফুসকুড়ি হয়।
৪. জিকা ভাইরাস: গর্ভবতী নারীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
৫. ফাইলেরিয়াসিস: কিউলেক্স মশার কামড়ে ছড়ায়, যা দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অক্ষমতার কারণ হতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয়:
মশার প্রজনন ও রোগ ছড়ানো রোধে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:
১. জমে থাকা পানি অপসারণ করুন: বাড়ি ও এর আশপাশের এলাকায় জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলুন।
২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন: বাড়ি, অফিস, ও এর আশপাশের এলাকাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
৩. মশারি ব্যবহার করুন: রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করুন।
৪. মশারোধী স্প্রে বা লোশন ব্যবহার করুন: ত্বকে এবং বাড়ির ভেতরে মশারোধী স্প্রে ব্যবহার করুন।
৫. গাঢ় রঙের পোশাক পরিহার করুন: হালকা রঙের পোশাক পরুন, যা মশাকে কম আকৃষ্ট করে।
৬. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলুন: ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
৭. জনসচেতনতা বৃদ্ধি করুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তুলুন।
সরকারি উদ্যোগ ও জনগনের সচেতনতা##
সরকারের উচিত মশা নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। স্থানীয় প্রশাসনকে জলাবদ্ধ এলাকা চিহ্নিত করে দ্রুত নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি, ফগিং মেশিনের মাধ্যমে মশা ধ্বংসে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার।
বর্ষাকালে মশার উৎপত্তি এবং এর ফলে রোগের প্রকোপ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জনগণের সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন এবং সবার জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করুন।